ইলা মজুমদারের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে। পিতা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা ছিলেন গৃহবধূ । যতীন্দ্রবাবু ছোট থেকেই মেয়েকে মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলেন। ১২ বছর বয়সেই ইলা সাইকেল চালাতে পারত। মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিখেছিলেন জিপ চালানো। খুলনায় তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৪৫ সালে ইলাদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে আসে।
১৯৪৭ সাল। ভারত ভাগ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। পশ্চিমবাংলার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্যতম পীঠস্থান। ১৯৪৭ সালেই পশ্চিমবাংলার তৎকালীন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দরজা খুলে দিল মহিলাদের জন্যে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুইজন ছাত্রী। ভর্তি হলেন দুজনেই। কিন্তু একজন দ্বিতীয় বর্ষেই কলেজ ছাড়লেন।
রইলেন একজন ছাত্রী। প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম দরকার বলে অধ্যক্ষ তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেন। শেষে ইলা ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
১৯৫১ সালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী। বাকি সকলেই ছিলেন ছাত্র।
প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। তখন ছাত্রীদের জন্যে আলাদা হোস্টেল ছিল না তাই ইলা মজুমদার থাকতেন লাইব্রেরির বাম প্রান্তের একটি ঘরে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পুলিন বিহারী ঘোষ এই সময় তার পাশে দাঁড়ান। কলেজে তিনিই ছিলেন ইলার অভিভাবক।
১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হলেন ইলা। তারপর ট্রেনিং করতে যান গ্লাসগো। ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন। তিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারী যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানায় কাজ করেছেন। সেই সময় ইলা থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে। ছয় মাস চাকরি করার পর দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার ছিলেন তিনি।
কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ইলা মজুমদার ই ছিলেন ঐ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল। তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে ১৯৮৫ তে জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু মাতৃভূমির টান তিনি ফেরাতে পারেন নি। ঢাকা এসে সাফল্যের সঙ্গেই কলেজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সম্পন্ন করেন।।
হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মারা যান নি, তিনি পালিয়ে গিয়ে আরো অনেক দিন বেঁচেছিলেন - এরকম নানা তত্ত্বকে ভুল দাবি করে একদল ফরাসী বিজ্ঞানী বলছেন, তারা নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন যে তিনি ১৯৪৫ সালেই বার্লিনে মারা গিয়েছিলেন।
ফরাসী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল রাশিয়ায় সংরক্ষিত হিটলারের দাঁত ও মাথার খুলির অংশ পরীক্ষা করে বলেছেন, হিটলার যে বুলেটের আঘাত ও সায়ানাইড পান করার ফলে মারা গিয়েছিলেন - এ ব্যাপারে তারা প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চিত।ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইন্টার্নাল মেডিসিন নামে এক সাময়িকীতে ওই পরীক্ষানিরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে বলছেন, তাদের এই জরিপের ফলে নাৎসী জার্মানির নেতার ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নস্যাৎ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের ৩০শে এপ্রিল বার্লিনে মার্টির নিচের বাংকারের ভেতর এডলফ হিটলার এবং তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী ইভা ব্রাউন আত্মহত্যা করেন।
ইভা ব্রাউন সায়ানাইড বিষ পান করেন, আর হিটলার নিজের মাথায় গুলি করেন এবং সম্ভবত সায়ানাইডও গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী ইভা ব্রাউনকে তার আগের দিন বাংকারের মধ্যেই বিয়ে করেন হিটলার।
তখন রুশ সৈন্যরা বার্লিন শহরের উপকণ্ঠে ঢুকে পড়েছে, এবং নাৎসী শাসকদের পতন নিশ্চিত হয়ে গেছে।
হিটলারের মৃতদেহ জার্মান সৈন্যরাই বাংকার থেকে বের করে রাইখ চ্যান্সেলরির বাগানে একটি গর্তে ফেলে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু তার মৃতদেহের কিছু অংশ রুশরা উদ্ধার করে এবং তা মস্কোয় নিয়ে যায়।
ফরাসী বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, ১৯৪৬ সালের পর তারাই প্রথম হিটলারের দেহাবশেষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন।
হিটলারের মাথার খুলির একাংশের বাম দিকে একটি গর্ত দেখা গেছে - যা সম্ভবত বুলেটের আঘাতে সৃষ্ট।
এ ছাড়া হিটলারের বাঁধানো দাঁতের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা নীলাভ আস্তরণ দেখতে পেয়েছেন - যা সম্ভবত ধাতব দাঁতের সাথে সায়ানাইডের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
হিটলারের মৃত্যু নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র তত্ব আছে।
কেউ বলেন, হিটলার ১৯৪৫ সালে মারা যান নি, তিনি জার্মানির পরাজয়ের পর একটি সাবমেরিনে করে আর্জেন্টিনা পালিয়ে যান। আরেক তত্ত্বে বলা হয়, হিটলার এ্যান্টার্কটিকায় এক গোপন ঘাঁটিতে চলে গেছেন।
প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে এএফপি-কে বলেন, তাদের গবেষণার পর এখন সব ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব থেমে যাওয়া উচিত।
হিটলারের মৃত্যুর পরদিন ১লা মে জার্মান রেডিওতে খবরটি ঘোষণা করা হয়।
সেদিন লন্ডনের ৪০ মাইল উত্তরে রেডিং শহরের উপকণ্ঠে বিবিসি মনিটরিংএর দফতরে বসে জার্মান রেডিওর অনুষ্ঠান শুনছিলেন জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা কর্মী কার্ল লিমান। তিনি বলছিলেন, শ্রোতাদের জানানো হলো যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসছে।
এর পর তারা ভাবগম্ভীর সঙ্গীত বাজালো, এবং ঘোষণা করলো যে 'বলশেভিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়' হিটলার মারা গেছেন।"
"তারা বলে নি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, বরং তাদের কথায় মনে হয় যে তিনি যুদ্ধ করতে করতে নিহত হয়েছেন - যা ছিল একটা বড় মিথ্যে।"
কয়েক দিন পর ৭ই মে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে - ইউরোপে ৬ বছরের যুদ্ধের অবসান হয়।
জন্মস্থান ১০০ নং গড়পার রোড
সত্যজিৎ রায়ের হাতে আঁকা
এই বাড়ি নিয়ে পরবর্তী সময়ে সত্যজিৎ রায় লিখেছেন, ‘ যে বাড়িতে আমার জন্ম সেই একশ নম্বর গড়পার রোডে আমি ছিলাম আমার পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত। তারপর অনেক বাড়িতে থেকেছি আর সবই দক্ষিণ কলকাতায়; কিন্তু গড়পার রোডের মতো এমন একটা অদ্ভুত বাড়িতে আর কখনো থাকিনি।’
গড়পারের বাড়িতে ছোট্ট মানিকের অনেকটা সময় কাটত রঙিন মলাট কুড়িয়ে। সারা দুপুর ধরে চলত এই মলাট কুড়ানোর অভিযান। কে জানত এই মলাট কুড়ানো খেলার ষোল সতেরো বছর পর তিনি নিজেই হয়ে উঠবেন বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পী! ১৯২৬ সালে গড়পারের বাড়ির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় কারণ দেনার দায়ে সমস্ত সম্পত্তি সহ বাড়িটি নিলাম হয়ে যায়। শুধু সুকুমার রায়ের কিছু পান্ডুলিপি আর খসড়া খাতা থেকে যায় নাবালক সত্যজিতের সম্পত্তি হিসেবে।
দু'হাজার সাত সালে বাজারে এসেছিল এমন একটি মোবাইল ফোন - যা সারা বিশ্বের যোগাযোগের প্রযুক্তি এবং এর সামাজিক ভুমিকার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল। সেই ফোনের নাম ছিল আইফোন।
সেই প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী ছিলেন এ্যান্ডি গ্রিনিয়ন - বিবিসির এ্যাশলি বায়ার্নের কাছে তিনি বর্ণনা করেছেন আইফোন কি ভাবে তৈরি হয়েছিল সেই সময়ের কথা।
"যখন প্রথমবার আমরা লোকের হাতে সেই আইফোন দেখতে পেলাম - যা আমরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করে বানিয়েছি - তখন তাদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়াটা ছিল এক কথায় দারুণ ব্যাপার" - বলছিলেন তিনি।
জানুয়ারি ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে এ্যাপল কোম্পানি প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস স্যান ফ্রান্সিসকোয় এক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছিলেন আইফোন নামে এক নতুন ধরণের মোবাইল ফোন - যা বিশ্বের কোটি কোটি লোকের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
আজ আমরা যাকে বলি স্মার্টফোন - তার সূচনা এখান থেকেই।
এই ফোনের ছিল একেবারে নতুন ধরণের টাচস্ক্রিন, সহজে ব্যবহার করা যায় এরকম ইন্টারফেস, আর সুন্দর ডিজাইন । সব মিলিযে দেখা গেল, একটা আইফোন হাতে থাকলে আপনার যেন আর কিছুরই দরকার নেই।
আপনি এতে গান শুনতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন, ভিডিও স্ট্রিম করতে পরেন, ইমেইল করতে পারেন, ইন্টারনেট ব্রাউজার করতে পারেন। তার সাথে ফোনে কথা বলা তো আছেই।
প্রযুক্তির দিক থেকে এটা ছিল এক নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়া, এবং সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা লোকেদের আইফোন দেখে রীতিমত তাক লেগে গিয়েছিল।
এক দল অভিজাত নারীকে নিয়ে ১৫৭৬ সালের কোন এক শরতের দিনে মক্কা ও মদিনার উদ্দেশ্য নজিরবিহীন সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন একজন মুঘল রাজকুমারী।
তিনি ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের মেয়ে গুলবদন বেগম।
সেবারই প্রথম বারের মতো মুঘল ভারতের কোন নারী মক্কায় হজ করতে যান। এসময় তার বয়স ছিল ৫৩ বছর।
রাজপরিবারের ১১ জন নারীসহ বেগম ফতেহপুর সিক্রি থেকে তিনি এই যাত্রা শুরু করেন। তাদের এই সফর পূর্ণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় বছর।
অসাধারণ এই সফরের বিশদ কোন বিবরণ সংরক্ষিত নেই।
ঐতিহাসিকদের মতে, খুব সম্ভবত নারী হবার কারণে তাদের ‘শালীনতা’ এবং ‘পবিত্রতা’ রক্ষার্থেই সেসময়ের পুরুষ ইতিহাসবিদদের বর্ণনা থেকে তারা বাদ পড়েছেন।
‘বীরত্ব’ এবং ‘উদারতা’র সাথে গুলবদনের মক্কা সফর এক ধরনের বিদ্রোহ ছিল বলেও মনে করেন ইতিহাসবিদ রুবি লাল।
সম্রাট হুমায়ূনের আত্মজীবনী হুমায়ূননামায় গুলবদনের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার বিবরণ থাকায় তাকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রথম এবং একমাত্র নারী ইতিহাসবিদ মনে করা হলেও, এতে তার সফর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নেই। এমনকি বেশ কয়েক পাতা ছেঁড়া থাকায় তার বইটিও অসম্পূর্ণ।
“গুলবদন এমন এক সময়ে লিখছিলেন যখন রাজকীয় কারো লেখার অনুলিপি করা ইতিহাসবিদদের জন্য খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। অথচ গুলবদনের বইয়ের একটিও সম্পূর্ণ অনুলিপি নেই," বলেন লাল।
তিনি উসমানীয় ইতিহাস, ফার্সি ও মুঘল পাণ্ডুলিপি এবং অন্যান্য বিভিন্ন সূত্র খুঁজে মুঘল শাহজাদির সফরের অনেক দুষ্প্রাপ্য বিবরণ সংগ্রহ করেছেন।
“এমন শক্তিশালী একজন নারীর অভূতপূর্ব সফর ঘিরে নীরবতা অনেক কিছুই জানান দেয়,” বলেন লাল৷
১৫২৩ সালে কাবুলে সম্রাট বাবরের তৃতীয় স্ত্রী দিলদার বেগমের ঘরে জন্ম নেন গুলবদন। তার নামের অর্থ গোলাপের মতো ত্বক।
গুলবদনের জন্মের সময় বাবা সম্রাট বাবর তার সঙ্গে ছিলেন না। সেসময় ‘হিন্দুস্তান’ নামে পরিচিত ভারতীয় উপমহাদেশ জয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
খুব শীঘ্রই নিজের বাবাকে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যস্ত দেখে কম সময়ের জন্য বাবার সঙ্গ পেতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন শাহজাদি গুলবদন। আর এই বিচ্ছিন্নতা তার বাবাসহ, সৎ ভাই হুমায়ূন এবং পরবর্তীতে তার ভাতিজা আকবরের মতো পরিবারের প্রায় সব শক্তিশালী পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
দূর-দূরান্তের ভূমিতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য যখন পরিবারের পুরুষরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন গুলবদন সম্রাটের মা, খালা, বোন, স্ত্রী ও তাদের মেয়েদের মতো রাজপরিবারের শক্তিশালী নারীদের সাথে বেড়ে ওঠেন।
বিশ্বস্ত উপদেষ্টা হিসেবে সম্রাট ও শাহজাদাদের রাজকার্য পরিচালনায় রাজদরবারে এই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
শৈশবেও ছোট্ট শাহজাদিকে সফর করতে হয়েছে। তার বাবার আগ্রা দখলের পর কোন মুঘল মেয়ে হিসেবে মাত্র মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি কাবুল থেকে আগ্রা সফর করেন। আফগান রাজা শের শাহ সুরি তার পরিবারকে হিন্দুস্তান থেকে বিতাড়িত করার পর বিবাহিত গুলবদন তার শৈশবের দেশ কাবুলে ফিরে যান।
কয়েক মাস ধরে চলা সেসব সফরে গুলবদন এবং অন্যান্য অভিজাত নারীরা তাঁবুতে থাকতেন এবং পালকিতে ও ঘোড়ায় চড়ে নির্জন পাহাড়ি অঞ্চল পাড়ি দিতেন। এসময় সাহসিকতার সঙ্গে তাদের শত্রু, চোর এবং অন্যান্য সব বাঁধার মোকাবিলা করতে হতো।
“মুঘল নারীরা ভ্রাম্যমাণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন,” বলেন লাল৷
“কারণ পুরুষরা যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় আর সফরে তাদের সঙ্গে থাকায় মোঘল নারীদের অনবরত ভ্রমণ করতে হতো”।
তিনি বলেন, এভাবে ভ্রমণের কারণেই সম্ভবত ১৫শ শতকের শেষের দিকে মুঘল শাহজাদি তার ভাতিজা আকবরের কাছে হজে যাওয়ার অনুমতি চান।
লাল বইটিতে লিখেছেন, মুঘল রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল আকবরের। আর হিন্দুস্তানে সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ‘নিজেকে একজন বিশুদ্ধ ব্যক্তিত্ব ও অদম্য আধ্যাত্মিক কর্তৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন’ তিনি।
মুঘল শাসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম সমস্ত মুঘল নারীদেরকে প্রাচীর ঘেরা হারেমে পর্দা করার আদেশ দেন।
লাল লিখেছেন, “রাজকীয় হারেমে কেবল আকবরের প্রবেশাধিকার এবং সেখানে থাকা নারীদের স্পর্শের বাইরে রেখে আকবর তাদের মহিমান্বিত করেছিলেন, যেটাকে তিনি ধর্মের ছায়াতলে থাকার হিসেবেই মনে করতেন”।
পরিস্থিতি গুলবদনকে অস্থির করে তুলেছিল। আর তাই ১৫৭৬ সালের অক্টোবরে তিনি এবং অন্যান্য রাজকীয় নারীরা মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এই সফর তার মানত ছিল বলে আকবরকে জানান তিনি।
আকবর তার নির্মিত প্রথম দুটি গ্র্যান্ড মুঘল জাহাজ - সালিমি এবং ইলাহি - তাদের সফরের জন্য বরাদ্দ করেন। রাজকীয় এই দল তাদের সাথে স্বর্ণখচিত বাক্সে দানের জন্য রৌপ্য এবং সোনার টুকরোসহ হাজার হাজার নগদ অর্থ নিয়ে যান। এছাড়াও অভিজাতদের মধ্যে বিতরণের জন্য সঙ্গে নেন বিশেষভাবে তৈরি ১২ হাজার পোশাক।
লাল তার বইতে লিখেছেন, “সেই যাত্রা দেখার জন্য সাধারণ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবক, শিশুরা লাল বেলে পাথরে তৈরি মুঘল রাজধানী ফতেপুর সিক্রির রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল”।
তবে সফরটি শুরু থেকেই ছিল বিপদসঙ্কুল। সেসময় মুসলিম জাহাজ পোড়ানো ও লুণ্ঠনের জন্য কুখ্যাত পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণে ছিল মক্কার সমুদ্রপথ। অন্যদিকে যাত্রীদের আক্রমণকারী জঙ্গি গোষ্ঠীর কারণে পারস্যের মধ্য দিয়ে যাওয়া স্থলপথটিও ছিল সমান ঝুঁকির।
পর্তুগিজদের কাছ থেকে নিরাপদ প্রস্থানের অনুমোদন পাবার আগে প্রায় এক বছর সুরাট বন্দরে আটকে ছিলেন গুলবদন ও তার সঙ্গীরা।
আরব সাগর পেরিয়ে জেদ্দায় পৌঁছানোর জন্য তারা চার সপ্তাহ যাত্রা করেন। আর মক্কায় পৌঁছাতে তাদের কয়েক দিন উত্তপ্ত মরুভূমির বালির ওপর উটের পিঠে ভ্রমণ করতে হয়।
কিন্তু গুলবদনের যাত্রার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ধাপটি আসে তার মক্কা পরিদর্শনের পর। কারণ তিনি ও তার দল পরবর্তী চার বছর আরবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
মুঘল শাহজাদির দানশীলতা ক্ষমতাসীন অটোমান সুলতান মুরাদকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। কারণ তিনি এই কাজগুলোকে আকবরের রাজনৈতিক শক্তি জাহিরের মাধ্যম হিসেবে দেখছিলেন।
আর তাই গুলবদন ও বাকি মুঘল নারীদের আরব থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে সুলতান তার লোকদের কাছে তিনটি ফরমান পাঠান।
প্রতিবারই গুলবদন আরব ছাড়তে অসম্মতি জানান।
“এটা একজন মুঘল নারীর বিদ্রোহের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত,” বলেন লাল৷
“এটাই প্রমাণ দেয় যে যে গুলবদন তার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন”।
অবশেষে সুলতান তার একগুঁয়েমিতে বিচলিত হয়ে মুঘল নারীদের বিরুদ্ধে ‘না-মেশরু’ শব্দের প্রয়োগ করেন। অটোমান তুর্কি ভাষায় নিন্দাসূচক এই শব্দের অর্থ ‘বাজে কাজ’।
শব্দটি এতটাই গুরুতর বলে বিবেচিত হয়েছিল যে আকবর এতে অসন্তুষ্ট হন।
এই ফরমানের পরই ১৫৮০ সালে গুলবদন এবং তার দল আরব ত্যাগ করে এবং তাদের কাফেলা ১৫৮২ সালে ফতেহপুর সিক্রি থেকে ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) পশ্চিমে খানওয়া পৌঁছে।
তার ফেরার পর গুলবদনকে একজন ‘নবাব’ (শাসক) হিসাবে সমাদৃত করা হয়। এমনকি আকবরের ইচ্ছায় তার আমলের একমাত্র নারী ইতিহাস লেখক হিসেবে আমন্ত্রিত হন গুলবদন।
কিন্তু গুলবদনের মক্কা সফর নিয়ে আকবরনামার একটি সম্পূর্ণ পরিচ্ছেদ থাকা সত্ত্বেও, আরবে তার সময় এবং সুলতান মুরাদের নিন্দার বিষয়ে সেই বই বা অন্য কোথাও কোন উল্লেখ নেই।
পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্য মিশরের পিরামিড! প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে নির্মাণ করা এই বিস্ময়কর স্থাপনার কাঠামো এবং নির্মাণশৈলীর রহস্য নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই।
পিরামিড মূলত সমাধিক্ষেত্র। প্রাচীন মিশরের শাসনকর্তা ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের সমাহিত করা হতো এই বিশাল সমাধিক্ষেত্রে।প্রায় কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার শ্রমিকদের দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন আসে ফারাওরা কেন এই স্থাপনা নির্মাণে এত সময় ও অর্থ ব্যয় করেছিল? মূলত প্রাচীন মিশরীয় সমাজে পরকালের ধারণা প্রচলিত ছিল। সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই এই বিরাট আকারের সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করা হয়।
মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যতদিন ফারাওদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তবে তার জন্য পৃথিবী থেকে পরকালের যাবার সময় ‘আত্মা’র নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। এই আত্মাকে তারা ডাকতো ‘কা’ বলে। এই ‘কা’ বেঁচে থাকার জন্য প্রসাদ আকারে খাবার, বিশ্রামের জন্য বিছানাসহ কিছু ব্যবস্থার দরকার ছিল বলে তারা মনে করতো। আর সে কারণেই প্রয়োজন পড়ে পিরামিডের।প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, পিরামিডের ভেতরে ফারাওদের ‘কা’ বেঁচে থাকতো। আর তাই ফারাওদের শরীর মমীকরণ করা হতো। তারা এটাও বিশ্বাস করতো যে পরপারের যাত্রার জন্য জাগতিক সব ধরনের জিনিসই প্রয়োজন হবে ‘কা’র। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সঙ্গে প্রয়োজন মতো ধন-সম্পদ দিয়ে দেয়া হতো।
পিরামিড নির্মাণের আগে মিশরীয়দের কবর দেয়ার পদ্ধতি ভিন্ন ছিল। তখন সমাধি দেয়া হতো চারকোনা ছোট আকৃতির ঘরে, যার নাম ছিল ‘মাস্তাবা’। খ্রিস্টপূর্ব ২৭৮০ অব্দের দিকে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া আকৃতির পিরামিড নির্মাণের জন্য একটির ওপর আরেকটি– এভাবে ছয়টি ধাপে প্রথম পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল।
জোসের নামের একজন ফারাওয়ের জন্য নির্মাণ করা এই পিরামিডের কোনাগুলো মসৃণ না হলেও এটাকেই প্রথম সত্যিকারের পিরামিড হিসেবে ধরা হয়। প্রচলিত আছে, এই সমাধির নকশাকারের নাম ছিল ইমহোতেপ। তাকেই পিরামিডের প্রথম নকশাকার হিসেবে ধরা হয়। প্রথম পিরামিড নির্মাণের পর পরবর্তী ফারাওরা আরও ভালো এবং বড় আকারের পিরামিড নির্মাণ শুরু করেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হার্ভার্ড ম্যাগাজিনে জনাথন শ’ প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্ক লেহনারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ‘পিরামিড দাসরা বানিয়েছিল’ প্রচলিত এই ভুল ধারণার বিপরীতে যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি। মার্ক লেহনারের পিরামিড নির্মাণকারী দের বসবাসের শহর খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে লেখাটিতে পিরামিডের কারিগরদের জীবনযাপনের বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে তারা সেখানে যে ধরনের খাবার খেতেন তা থেকে বোঝা যায় দাস বা সাধারণ কর্মী না, তারা ছিলেন ‘দক্ষ কারিগর’।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অ্যামেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ জর্জ রিনজার পিরামিডের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি দেখতে পান, যেখানে পিরামিড নির্মাণকারীদের ‘খুফুর বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মিস্টার লেহনারের ধারণা, মিশরীয় সমাজ কিছুটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হতো, যেখানে প্রায় প্রত্যেকেই শাসকের সেবা করতেন। মিশরীয়রা একে বলতো ‘বাক’।
পিরামিড নির্মাণের খরচ অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় ফারাওরা শেষ পর্যন্ত ওল্ড কিংডম বা প্রাচীন সাম্রাজ্যের শেষের দিকে পিরামিড নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া বিরাট আকারের পিরামিডগুলোতে ধন-সম্পদ পাওয়া যাবার কারণে মিশরীয়রা নিজেরাই সেগুলো লুট করে নিতো। পরে পিরামিড তৈরির বদলে ভ্যালি অব কিংসের গোপন সমাধিক্ষেত্রে ফারাওদের সমাহিত করা হতো।
প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল আন্দোলনের। আর এই ভাষা আন্দোলনকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হয়।
প্রতি বছর, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এই বছর, এই বিশেষ দিনটি বুধবার পড়েছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে সরকারি ভাষা করার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে চার ছাত্র নিহত হন। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে, জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (UNESCO) সাধারণ সম্মেলন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা পরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্বাগত জানিয়েছিল।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সম্মানে এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষার গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে নানা কর্মকাণ্ড ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘও এই দিবসটি উদযাপনকে সমর্থন করে এবং এর সদস্য দেশগুলোকে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বহুভাষিকতার প্রচারে উৎসাহিত করে।
যখন ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগেই আসলে শুরু হয়েছিল ভাষা নিয়ে বিতর্ক। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক তাদের ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস ও তাৎপর্য বইয়ে লিখেছেন, "প্রথম লড়াইটা প্রধানত ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ"। এই বইটির বর্ণনা অনুযায়ী দেশভাগের আগেই চল্লিশের দশকের শুরুতেই সাহিত্যিকরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সেসময় বাঙালী মুসলমান সাহিত্যিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলা, উর্দু, আরবি ও ইংরেজি এই চারটি ভাষার পক্ষ-বিপক্ষে নানান মত ছিল।
উনিশশো সাতচল্লিশ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেছিলেন। তখন ভাষা নিয়ে বিতর্ক আবারো জেগে উঠেছিলো। ততদিনে মুসলিম বাঙালীদের আত্ম-অন্বেষণ শুরু হয়ে গিয়েছিলো। দেশ বিভাগের কয়েক মাসের মধ্যেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা, ডাকটিকেট, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড ইত্যাদি থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই ঘোষণায় পর ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।কমিশনের বাঙালী কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাংলা ভাষার প্রয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। পাকিস্তান গঠনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, পরবর্তীতে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে আইন পরিষদের অধিবেশনে বলেছিলেন, ভাষা সম্পর্কিত বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই এসব ছাপা হয়ে গেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে যা ঘটেছিল
বলা হয়ে থাকে রাজনৈতিক কারণে নেয়া খাজা নাজিমুদ্দিনের অবস্থান ও তার বক্তব্য ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। তার ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে বঞ্চনার অনুভূতি আরও জোরালো হয়ে জেগে ওঠে।খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পরদিন থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল। যাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।ভাসানীর নেতৃত্বে সম্মেলনে অংশ নেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সংস্কৃতিকর্মী এবং পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষজন। একুশে ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছিল।ধর্মঘট প্রতিহত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিলো। যা লঙ্ঘন করেই জন্ম হয়েছিল শহীদ দিবসের। সেই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ছিলেন মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন। কয়েক বছর আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে সেদিনকার চিত্র। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, "একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে গ্রহণ করি আমি। কপালে গুলিবিদ্ধ রফিককে দেখেই মৃত ঘোষণা করা হয়, আর উরুতে গুলিবিদ্ধ বরকত মারা যান রাতে, আমার চোখের সামনেই।"ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছেই গুলিবর্ষণ হয়েছিল শিক্ষার্থীদের উপর। তিনি বলছিলেন, "আমরা তখন বাইরে থেকে বহু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমরা শুনেছিলাম বহু মানুষ গুলিতে আহত হয়েছে।মুহূর্তেই এমারজেন্সি ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে যায়। আহতদের অনেকেই মুমূর্ষু, তাদের সঙ্গে আসা মানুষজন আর চিকিৎসকে ঠাসাঠাসি হয়ে যায় জরুরী বিভাগ।" ভাষা আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছিলেন সেবিষয়ে সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায় না। সেদিন এবং পরদিন পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং শফিউর ছাড়াও আরো অনেকে শহীদ হয়েছিলেন বলে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ে উঠে এসেছে।
১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান সংসদ বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আরও দুই বছর।
পিথাগোরাস – নামটি শুনলেই সবার প্রথম কি মনে আসে? অবধারিতভাবে চলে আসে পীথাগোরাসের উপপাদ্য। যদিও সমকোণী ত্রিভুজের তিন বাহুর মধ্যকার সম্পর্কের জটিল এই জ্যামিতিক সূত্র তারই আবিষ্কার কি-না এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে।আসলে পিথাগোরাস কে? গণিতজ্ঞ, দার্শনিক নাকি কোন ধর্মীয় গুরু?
পিথাগোরাস সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে তার মারা যাওয়ারও দেড়শো বছর পর। প্লেটো আর এরিস্টটলের উপর তার বিরাট প্রভাব ছিল। এই দুজন বিভিন্ন সময় পিথাগোরাসের উল্লেখ করেন। এছাড়া পরবর্তীতে অন্যান্য দার্শনিকদের লেখা থেকেই পিথাগোরাস সম্বন্ধে জানা যায়।
৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্ম তার। যদিও তাঁর জন্মস্থানের ব্যাপারে একমত ইতিহাসবিদেরা, আর সেটা হলো প্রাচীন গ্রীসের সামোস। মনে করা হয় তার মা ছিলেন এই দ্বীপেরই বাসিন্দা আর বাবা ছিলেন প্রাচীন শহর টায়ারের একজন বণিক। পিথাগোরাসকে নিয়ে যত মিথ আছে তার মধ্যে একটা হলো তিনি সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর সন্তান। তার অনেক জীবনীকার লিখেছেন, পিথাগোরাসের জন্মের আগেই তার বাবা-মা’কে এক সাধু বলে যান তাদের ছেলে জ্ঞান ও দর্শনে পৃথিবীর অন্য সব মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে।
এরিস্টটলের এক শিষ্য পিথাগোরাস মারা যাওয়ার কয়েক শতক পরে তাকে নিয়ে লেখেন, “পীথাগোরাস ছিলেন খুবই লম্বা এবং অভিজাত দেখতে।” জ্ঞান আহরণের জন্য পিথাগোরাস অল্প বয়সেই মিশর যান। কোনো কোনো জীবনীকারের মতে সেখানে তিনি খোদ এক ফারাওয়ের কাছ থেকেই মিশরীয় ভাষা শেখেন।সেখান থেকে ব্যবিলনে যান পিথাগোরাস। আর এখানেই ‘পিথাগোরাসের উপপাদ্যে’র সূত্রপাত বলে মনে করা হয়। এরপর সামোসে ফেরত আসেন পিথাগোরাস ও সেখানে একটা স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। *পিথাগোরাসের উপপাদ্য* অনুসারে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ, এর লম্ব ও ভূমির বর্গের যোগফলের সমান। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় জ্যামিতিক সূত্র এটি। ধারণা করা হয় যে পিথাগোরাস যেহেতু ব্যাবিলনে গিয়েছিলেন, তিনি সেখান থেকে এটি শিখে এসে গ্রিসের মানুষদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেন এবং পরবর্তীকালে গ্রিস থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ে তাকেই এর কৃতিত্ব দেয়া হয়। আর এভাবেই বিশ্বজুড়ে এটি পরিচিতি পায় ‘পিথাগোরাসের উপপাদ্য’ হিসেবে।
“আজ আমরা পিথাগোরাস সম্পর্কে যা জানি তার বেশিরভাগই এসেছে প্লেটো, এরিস্টটলসহ অন্য লেখকদের লেখা থেকে” – পিথাগোরাস সম্পর্কে এমনটাই বলছে রিপলি’স। প্লেটো আর এরিস্টটলের উপর পিথাগোরাসের ব্যাপক প্রভাব ছিল এবং তারা দুজনই নানা দার্শনিক ও ধর্মীয় চিন্তায় পিথাগোরাসের অবদানের কথা বলেছেন।
পিথাগোরাস ‘মেটেমসাইকোসিস’ বা ‘পুর্নজন্মে’ বিশ্বাস করতেন। অর্থাৎ আত্মা অবিনশ্বর এবং তা এক দেহ থেকে অন্য দেহে প্রবেশ করতে পারে। যার মানে মানুষ মারা যাবার পর তার আত্মা অন্য শরীর এমনকি সেটা পশু পাখির শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফিতে বলা হয় যে, কারো কারো মতে পিথাগোরাসই ‘দর্শন’ শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বোঝাতে।
পিথাগোরাসের জীবনের মতো মৃত্যু নিয়েও নানা গল্প আছে। তাঁর পরবর্তী দিকের জীবনীকাররা লিখেছেন, স্বৈরশাসন থেকে পালিয়ে ইতালি এসে মধ্যবয়সে পিথাগোরাস নিজেই স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন। ব্রিটানিকা বর্ণনা করছে, একসময় ক্রোতোনে পিথাগোরিয়ান বিরোধী মনোভাব জেগে উঠে, ফলে ৫১০ খ্রিস্টপূর্বে তিনি পালিয়ে মিটাপনতাম (বতর্মান ইতালির মেটাপনতো) শহরে চলে আসেন।
সেখানেও দ্রুত তার অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু বিপত্তি বাধে গ্রীসের এক ধনী অভিজাত পরিবারের সন্তানের পিথাগোরিয়ান গোষ্ঠীতে যোগ দেয়া নিয়ে। কঠোর অনুশাসন ও সমস্ত নিয়ম মানা তার পক্ষে সম্ভব হবে না ভেবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করেননি পিথাগোরাস।সেই ছেলেটি পরে শহরের লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তোলে পিথাগোরাসের বিরুদ্ধে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ভীষণ চাপের মধ্যে পড়ে পিথাগোরিয়ানদের কেউ কেউ পালাতে থাকে, অনেকে মারা পড়তে থাকে। ব্রিটানিকা অনুযায়ী ৪৯০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে পিথাগোরিয়ানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উপচে পড়ে। তাদের আস্তানায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও হামলা শুরু হয়।
শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে তিনি পড়ে যান এক মটরশুঁটি ক্ষেতের সামনে।এখন তাঁর সামনে উপায় ছিল মটরশুঁটি ক্ষেত মাড়িয়ে দৌড়ে চলে যাওয়া। কিন্তু পিথাগোরাসের বিশ্বাস ছিল মটরশুঁটি মৃতদের আত্মা বহন করে, তাই তাদের খেয়ে ফেলা বা ক্ষতি করা মানে আত্মার ক্ষতি। তার বিশ্বাস, তার অনেক বন্ধুই আছে এসব মটরশুঁটির ভেতর।ফলে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন ও পেছন থেকে আক্রমণকারীরা এসে তাঁকে হত্যা করে।
Copyright © 2024 THE_BENGAL_BULLETIN - All Rights Reserved.
In a moment that resonated with pride and emotion, veteran actor Mithun Chakraborty was conferred the prestigious Dadasaheb Phalke Award for 2024. With an illustrious career spanning over four decades, Mithun da's iconic roles have left an
We use cookies to analyze website traffic and optimize your website experience. By accepting our use of cookies, your data will be aggregated with all other user data.